অজয় বাঙ্গা এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপ সফরেও যাবেন। বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস জুনের শেষে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন—হঠাৎ করে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর হোয়াইট হাউস তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করে।

পাঁচ বছর মেয়াদের এক বছর বাকি থাকতেই সরে দাঁড়াতে যাচ্ছেন ডেভিড ম্যালপাস। তাঁকে মনোনীত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্বের উষ্ণায়নে সত্যিই ভূমিকা রাখে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করার পর তাঁকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

চলতি সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে অজয় বাঙ্গা অবশ্য পরিষ্কার করে দেন যে জলবায়ু পরিবর্তন কেন ঘটছে, তা নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ।’

জলবায়ু সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ক্রমবর্ধমান উচ্চাভিলাষ ও দারিদ্র্য বিমোচনে এটির লক্ষ্যের মধ্যে একটি ভারসাম্য রাখার বিষয়ে সচেতন অজয় বাঙ্গা। তিনি মনে করেন, দুটো বিষয়ই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত ও দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংকের মনোনয়নপ্রক্রিয়া চলবে ২৯ মার্চ পর্যন্ত। অন্য দেশও প্রার্থী মনোনীত করতে পারে। তবে প্রচলিত প্রথা হচ্ছে, ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শেয়ারমালিক যুক্তরাষ্ট্র একজন আমেরিকান নাগরিককে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বাছাই করে। ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ড মে মাসে নতুন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবে।

নির্বাচিত হলে অজয় বাঙ্গাকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিন বছর ধরে চলা মহামারি এবং যুদ্ধ থেকে বিশ্ব অর্থনীতি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তবে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়েছে আর দারিদ্র্য বেড়েছে।

উদীয়মান অনেক অর্থনীতি খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ঋণ মওকুফের পক্ষে কথা বলছে।

বিশ্বে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয়, তার অন্যতম চীন। তবে বাইডেন প্রশাসন মনে করে ঋণ পুনর্গঠনে অন্যতম বড় বাধা এই দেশটি। অজয় বাঙ্গা অবশ্য চীনের সমালোচনা করতে চান না। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সেখানে যাবেন বলে আশাবাদী।

গত বৃহস্পতিবার অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘আজ আমি যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত প্রার্থী। কিন্তু আমি যদি যথেষ্ট ভাগ্যবান হই এবং নির্বাচিত হই, তাহলে এই ব্যাংকের যাঁরাই অংশীদার, আমি তাঁদের সবাইকেই প্রতিনিধিত্ব করব।’

তাঁর মনোনয়নের পর জলবায়ু আন্দোলনকারী এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এই দুই পক্ষ থেকেই প্রশংসা ও সংশয়বাণী শোনা গেছে। কিছু জলবায়ু আন্দোলনকারী তাঁর অভিজ্ঞতার ঘাটতির কথা তুলে ধরেছেন। তাঁরা উদ্বিগ্ন যে অজয় বাঙ্গা এমন সব কোম্পানির হয়ে কাজ করেছেন, যাদের সঙ্গে তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগকারীদের সম্পর্ক ছিল।

তবে অনেকেই আবার তাঁর প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। তাঁদের কথা, অজয় বাঙ্গা ‘বিশ্বব্যাংকের জলবায়ু সংকটের বিষয়ে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসবেন’। অনেকের কাছে তিনি বিশ্বব্যাংকের কাজের লম্বা তালিকায় এখনো যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করবেন।

একজন নারীকে কেন প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেওয়া হলো না, সে জন্য বাইডেন প্রশাসনকে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ পদে এখন পর্যন্ত শুধু পুরুষেরাই নির্বাচিত হয়েছেন।

তবে অজয় বাঙ্গা মনে করেন যে তাঁর মতো একজন যিনি ভারতে জন্ম নিয়েছেন এবং পড়াশোনা করেছেন, তিনি বিশ্বব্যাংকে বৈচিত্র্য ও অনন্য পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আসতে পারবেন।

মাস্টারকার্ডে কাজ করার সময় নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের জেষ্ঠ পদে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাঁর অঙ্গীকারের কথাও তিনি তুলে ধরেন।

অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখানে জন্ম হয়নি এবং শিক্ষা নেয়নি এমন একজনকে খুঁজে বের করার জন্য প্রশাসন কৃতিত্ব পেতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষকে সমান সুযোগ দেওয়া আমাদের কাজ।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here