মুক্তির মিছিল,  ঢাকা, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩ : দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কমছে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক। উচ্চশিক্ষায় শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর শিক্ষার্থীদের এই গবেষণার পথ দেখান শিক্ষকেরা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় পিএইচডি ডিগ্রিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অথচ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধারাবাহিকভাবে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক কমছে। যদিও দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

বাকি বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা কমছে। যেমন ২০১৯ সালে পিএইচডিধারী শিক্ষক ছিলেন ৩ হাজার ২০৯ জন, পরের বছর ছিলেন ২ হাজার ৯৫০ জন। সর্বশেষ ২০২১ সালে এসে তা আগের বছরের তুলনায় ছয়জন কমে যায়। এখন পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে ১ হাজার ৮১৭ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। বাকি ১ হাজার ১২৭ জন খণ্ডকালীন।

পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিধারী শিক্ষক সবচেয়ে বেশি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে, ২৮৩ জন। এ ছাড়া ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ২২৮ জন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ১৯৪ জন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ১৭৮ জন শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রিধারী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান ও সুনামের দিক দিয়েও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে রয়েছে। আর সবচেয়ে কম পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক নতুন প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, মাত্র একজন।

ইউজিসির মূল্যায়ন হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা কমছে, যা ভালো লক্ষণ নয়। পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে পিএইচডিধারী শিক্ষক বেশি হলে শিক্ষার্থীরা বেশি উপকৃত হতেন।

এ তো গেল পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক কমার কথা। গবেষণার ক্ষেত্রেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়–গুলোতে গুরুত্ব কম। ইউজিসির তথ্য বলছে, ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালে গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি। গবেষণাতেও সেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মতো হাতেগোনা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এগিয়ে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক কমে যাওয়া এবং গবেষণায় গুরুত্ব কম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আতিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর ধারণা ছিল, অন্যগুলোতেও বাড়ছে। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, কমছে। আসলে এ জন্য শিক্ষকদের বেতনের পাশাপাশি কর্মপরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয় বাড়লেও কমেছে শিক্ষার্থী

ইউজিসি জানায়, দেশে যত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক হয়েছে গত এক দশকে। ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৬০টি, যা বেড়ে এখন ১০০ ছাড়িয়েছে। যদিও ২০১৯ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী কমছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ৩ লাখ ১০ হাজার ১০৭ জন। যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

বাণিজ্য বিষয়ের চাহিদা কমছে

২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিবছরই ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী কমছে। বাড়ছে প্রকৌশল, কারিগরি ও বিজ্ঞানবিষয়ক বিভাগগুলোর শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে কারিগরি ও প্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটাই ‘টিচিং বিশ্ববিদ্যালয়’, যেখানে কেবল ডিগ্রি দেওয়া হয়। গবেষণায় জোর দেওয়া হয় না। হাতেগোনা কয়েকটি গবেষণায় জোর দেয়। ভালো মানের শিক্ষক নিতে হলে ভালো বেতন–ভাতাসহ সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কনিষ্ঠ শিক্ষক দিয়ে চলে। আর পিএইচডি ডিগ্রিধারীসহ ভালো মানের শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার মানের ওপরও প্রভাব পড়ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here