পাকসেনারা ২৭শে মার্চ সমশের নগর বিমানঘাঁটি দখল করতে আসে। কৈলাসহর থেকে মাত্র ৩০মিনিটের পথ সমসেরনগর। যোগাযোগের দিক থেকে এবং সামরিক দিক থেকে ছোট ছোট টিলা জঙ্গল ও চা বাগানে ঘেরা এই অঞ্চলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিমানবন্দরটিকে যাতে স্থায়ী ঘাঁটি বানাতে না পারে সেজন্য মুক্তিবাহিনী আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়। ইপি আর এর এক কোম্পানী জওয়ান এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে এক শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলা হয়েছিল। সুবেদার সামসুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ই পি আর-রা সেদিন প্রতিরোধ করে। সঙ্গে ছুটিতে আসা একজন সেনাবাহিনীর জওয়ান মাসুদ সেও অংশ গ্রহণ করে। তাছাড় মুজাহিদিন ট্রেনিং প্রাপ্ত সৈদল বাজারের অন্যতম সাহসী মুক্তিযোদ্ধ আব্দুল গফুর ও যোগ দিয়েছিল। আরো অনেকের সাথে তখন পরিচয় হয়। এদরে নাম আর মানে নেই। গফুরের কথা বিশেষ করে মনে পড়ার কারণ হচ্ছে ওর সাহসী ভূমিকাদেখ আমি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হই। এবং কখন যে আমরা বন্ধু হয়ে উঠি যোদ্ধা ও দুই শতাধিক জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এটিই ছিল সিলেটের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। বিমান বন্দরে প্রতিরোধের পর এই বিমান ঘাঁটিতে যাতে আর বিমান আবতরণ করতে না পারে এই চিন্তা করে সেই সময় বিমানঘাঁটিটি নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। সমসেরনগর আক্রমণের আগে পাক বাহিনী একটি জীপে করে ভানুগাছ সডাকবাংলাতে যায়। রাস্তায় হাজার হাজার জনতা তাদের পথ অবরোধ করে। সমসেরনগর আক্রমণের আগে পাক বাহিনী একটি জীপে করে ভানুগাছ সডাকবাংলাতে যায়। রাস্তায় হাজার হাজার জনতা তাদের পথ অবরোধ করে। জনতা তাদের লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়ে। পাকবাহিনীও এলোপাথারী গুলি ছুঁড়ে। কয়েকজন সাধারণ বাঙালিকে ধরে নিয়ে আসে ওরা। অবশ্য সমশের নগরে প্রতিরোধে এইসব পাক সেনারা সকলেই নিহত হয়।
২৮শে মার্চ আবার সমশেরনগর বাজরে আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। এর মধ্যে সমশের নগরেই ইউনিয়ন চ্যায়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমেদ, সাজ্জাদুর রহমান, আমজাদ আলী প্রমুখ এক গোপন মিটিং কর সীমান্ত ফাঁড়ি গুলোর সমস্ত ই পি আরদের মুক্তি যুদ্ধে সামলি হওয়ার জন্য আহŸান জানান। ভোরে আলো ফুটতেনা ফুটতেই জাহার জাহার জনতা চারদিক থেকে মিছিল সহকারে সমশেরনগর বাজারে জড়ো হতে থাকে। এমন সময় মৌলভী বাজরের দিকে থেকে ৩টি সমারিক গাড়ী করে রেলষ্টেশনের কাছে একটি মালগাড়ীর কামরড়া থেকেই বাজারের দিকে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে ওরা। ভেবেছিল গুলি ছুড়লেই জনতা ছাত্রভঙ্গ হয়ে পালাবে। কিন্তু সেদিন সমশেরনগরের আমান উল্লার বিল্ডিং এর উপরে এবং নীচে একটি মষ্টি দোকনে দেয়ালের আড়ালে মুক্তি যোদ্ধারা পজিশন নিয়েছিল। পাকবাহিনী গুলি ছুঁড়তেই দুজন ই পি আর বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। মুহূর্তের মধ্যে এক পাক সেনা লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। দেখতে দেখতে আরও একজন আহত হয়ে কাতরাতে থাকে। চারিদিক থেকে জনতা বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। হাজার হাজার জনতার উন্মত্ত চীৎকারে পাক সেনারা দিশেহারা হয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। একটু পরেই আবার ফিরে আসেও ততোক্ষণে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বেড়ে গেছে। দেখতে দেখতে আরো ই পি আর এসে জােড় হয়েছিল। পাক কনবয়গুলো এসে পড়ে মুক্তি যোদ্ধাদের রাইফেলের রেঞ্জের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠে বাঙালি ই পি আর ও মুক্তি যোদ্ধাদের হাতের অস্ত্র। এখানে সব পাক সেনাই নিহত হয়। ক্যাপ্টেন গোলাম রসুল সহ কয়েকজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও বিফল হয়। মুক্তি যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে প্রাণ দেয়। এই সময় মৌলভীবাজরে তখন পাক বাহিনীর লেঃ কর্ণেল সুলতান মাসুদ, মেজর, তারেক, ক্যাপ্টেন গণি, মেজর আসগর অবস্থান করছিল। এই পরাজয় এর সংবাদ পেয়েই তারা ঢাকার সাথে যোগযোগ করে বিমান হামলার পরামর্শ দেয় এবং পাকবাহিনী যে কোন মূল্যে সমশেরনগর বিমান ঘাঁটি দখলের প্রস্তুতি নেয়। ২ শে মার্চ পাকবাহিনী আবার সমশেরনগরে বিমান হামলা করে। মানুষ জন আগইে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বিমানবন্দর দখল নেয়া সম্ভব হয়নি কারণ এটিকেস আগেই বমিান অবতরণের অনুপযেগী করে তোলা হয়েছিল। রাগে ক্ষেবে পাক সেনারা কিছু এলাপাথারী গুলি ছুঁড়ে চলে যায়। চাতলাপুর চা বাগনের বাংলোতে বিমান থেকে যে সেলিং করা হয়েছিল সেই দাগগুলো এখনও রয়েগেছে। সেদিন চাতলাপুর চা বাগানে সেই বাংলোতে কিছুক্ষণ ছিলাম। বর্তমান ম্যানাজার আসান উল্লাহ্ সাহেব জানালেন এই দাগগুলোকে অক্ষত অবস্থায় রেখেই বাংলোটির সংস্কার করা হয়েছে। সেই সময় বেঙ্গল রেজিমেন্টের খালেদ মোশারফ নামে এক বাঙালি মেজর সমশেরনগরে একা পড়ে গিয়েছিলেন। তাই মেজন জেনারেল আব্দুল রবের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা অরুনাভ পাল, আব্দুল মান্নান আমজাদ আলী প্রমুখের সাহায্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। তখন ৩৩ জন বাঙালি ই পি আর বেশ কয়েকটি লাস নিয়ে একটি জীপে করে …

মুসাহিদ আলী
সাংবাদিক, আগরতলা ত্রিপুরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here