মুক্তির মিছিল, ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ : অর্থনৈতিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি শেষ অবলম্বন হিসেবে চরম সংকটে পড়া কয়েকটি দেশকে বেলআউট বা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নামে ঋণ দেয়, যা দিয়ে দেশগুলো আর্থিক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করে।

করোনা মহামারি যেতে না যেতেই ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ এবং দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়েছে। তাতে তেমন ফল না পাওয়ায় কয়েক ডজন দেশ বাধ্য হয়ে আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে। গত বছরের আগস্ট নাগাদ ৪৪টি দেশ এ সংস্থা থেকে ১৪০ বিলিয়ন ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ নিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইএমএফকে ঋণ বিতরণ বাড়াতে হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক ঋণ বাজারের বাইরে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ সহায়তার জন্য আইএমএফের কাছেই যেতে হয়। আইএমএফ ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশকে এ রকম ২৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দেশগুলোর সামনে আইএমএফের ঋণ পরিশোধের চাপও আছে। এ সম্পর্কে বোস্টন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের কেভিন গ্যালাঘের বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে ৫৫টি ২০২২ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৪৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধের সম্মুখীন হবে। এর মধ্যে ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রায় ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে আরও প্রায় সাত হাজার কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে।

কোভিড–১৯ মহামারির কারণে জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম প্রভৃতি দেশ ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছিল। ঋণ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এসব দেশ বাধ্য হয়ে আইএমএফের সঙ্গে বেলআউট বা আর্থিক পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনায় বসে। মিসর, তিউনিসিয়াও অনুরূপ সমর্থনের জন্য আইএমএফের সঙ্গে এখন আলোচনায় রয়েছে। ঘানা সম্প্রতি ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। আর্জেন্টিনাও ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার পাওয়ার চেষ্টায় আছে।

আইএমএফের নিয়ম অনুযায়ী সদস্যদেশগুলো সাধারণত তাদের আইএমএফ কোটা বা শেয়ারের ১৪৫ শতাংশের সমান অর্থ পেতে পারে। আইএমএফের মোট ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ৯৪ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য রয়েছে ৩৭ হাজার কোটি ডলার।

শ্রীলঙ্কা চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পরিস্থিতিতে গত বছরের এপ্রিলে নিজেকে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে আইএমএফ ২৯০ কোটি ডলারের বেলআউট কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু ঋণ পুনর্গঠনের শর্ত পূরণ করে দেশটি ওই ঋণ নিতে পারছিল না। সম্প্রতি প্রতিবেশী ভারতের পাশাপাশি চীনও আইএমএফের ঋণের গ্যারান্টার বা জিম্মাদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে আগামী মার্চ নাগাদ শ্রীলঙ্কা ঋণ দিতে পারে।

ডলার–সংকটের কারণে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধসহ বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে পারছে না। তাই আর্থিক পুনরুদ্ধারের জন্য ২০১৯ সালে দেশটিকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় আইএমএফ। গত বছর বন্যার পর দেশটিকে আরও ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা বলেছিল আইএমএফ। কিন্তু আর্থিক খাতে সংস্কারে ব্যর্থ হওয়ায় গত নভেম্বরে তা বিতরণ স্থগিত করে সংস্থাটি। সম্প্রতি আইএমএফ আবার পাকিস্তানে অর্থ বিতরণ শুরু করতে রাজি হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য শিগগির একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা আইএমএফের। এদিকে সংস্থাটি নতুন করে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার চাপ দিয়েছে। কারণ ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মান রেকর্ড পরিমাণে কমেছে। গত বৃহস্পতিবার তা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কমার পর প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৫৫ রুপি।

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর তৃতীয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি দেয়। গতকাল সোমবার আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।  সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, এনডিটিভি, ফার্স্টপোস্ট।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here